প্রকাশিত: ২০/০৮/২০১৮ ৭:১১ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি
ছোটশহর খাগড়াছড়ি। পুরো শহরের বেশির ভাগ জনাকীর্ণ এলাকা সিসি টিভির আওতায় এনেছে পুলিশ। সেই সুবাদে স্বনির্ভর বাজারে শনিবার সকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ফুটেজও এখন পুলিশের কব্জায়। সেই ফুটেজে অপরাধীদের চেহারা এবং এসএমজির মতো ভারী অস্ত্রের দেখাও মিলছে। আর এই ফুটেজ থেকেই অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজটি সহজ হবে বলে মনে করছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান।
রোববার বিকেলে নিজের কার্যালয়ে তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান, শনিবারের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে সেনা-বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী রোববার থেকে সপ্তাহব্যাপী অভিযানে নেমেছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ স’ানগুলোতে চেকিং ছাড়াও প্রযুক্তিগত সুবিধার প্রয়োগের মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের গতিবিধিতে নজরদারি চলছে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং জনমনে আস’া ফেরাতে সামাজিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা নেয়া হবে।
ঘটনার পর দুদিন গড়ালেও নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, কয়েকদিন পরও যদি নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা না হয়, তাহলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করবে।
শনিবারের ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কোরবানির সরকারি ছুটি বাদে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবার কথা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করা এই কমিটি সোমবার থেকে সরেজমিনে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
খাগড়াছড়ির পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বলেন, চাঁদাবাজির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজনীতির নামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলো। নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তারা। তাদের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পাহাড়ি-বাঙালি সব শেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার সময় এসে গেছে।
এদিকে রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সাথে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, শনিবারের ঘটনাটি দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং জেলার জন্য নেতিবাচক। তিনি জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। ২১ (আগামীকাল) আগস্ট চট্টগ্রামের জিওসি, বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিআইজি খাগড়াছড়িতে আবারো মতবিনিময় করবেন।
ওই সভায় পরিবহন ও ব্যবসায়ী নেতারা ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠনের ডাকা আজকের আধাবেলা সড়ক অবরোধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নিহতদের দাহক্রিয়া সম্পন্ন : শনিবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাতজনের লাশ হন্তান্তর শেষে দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল বিকেলে উত্তর খবংপুরিয়া শ্মশানে দাহ করা হয় স্বাস’্য সহকারী জিতায়ন চাকমা ও রূপম চাকমাকে। এরপর বিকেল আড়াইটার দিকে পলাশ চাকমা, তপন চাকমা ও এলটন চাকমা ইউপিডিএফ-এর অঙ্গ সংগঠনের এই তিন নেতাকর্মীকে পুলিশ পাহারায় দক্ষিণ খবংপুরিয়া শ্মশানে নিয়ে গিয়ে আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে দক্ষিণ খবংপুরিয়া শ্মশানে তাদের দাহ করা হয়। এছাড়া ধীরাজ চাকমাকে পানছড়ি উপজেলার উগলছড়ি গ্রামের শ্মশানে এবং শন কুমার চাকমাকে শিবমন্দির গ্রামের শ্মশানে দাহ করা হয়। সবাইকে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে দাহ করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় খাগড়াছড়ি-পানছড়ি যানচলাচল করলেও স্বনির্ভর এলাকায় সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে এখনো।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) সোমবার সারা জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
হামলার পর থেকে ঘটনাস’লের আশপাশ এলাকায় এখনো থমথমে অবস’া বিরাজ করছে। আতংক বিরাজ করছে স’ানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। স্বনির্ভর বাজারের দোকানপাট আজও খোলেনি। তবে বন্ধ থাকা খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে রোববার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিবাদে ২০ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালন করবে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিনটি পাহাড়ি সংগঠন।
গত শনিবার সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ৭ জন নিহত হন।

পাঠকের মতামত

গদি নেই তবু সাবেক এমপি বদি!

আবদুর রহমান বদি। কক্সবাজার-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন, তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে। মাদক ...

মিয়ানমারে সশস্ত্র লড়াই: আরাকান আর্মির কাছে গুরুত্বহীন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি আদায় এবং রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ...